বান্দরবান ভ্রমন নিয়ে কিছু কথা বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে একটি হলো বান্দরবান। বান্দরবানের দক্ষিণ-পশ্চিমে কক্সবাজার, উত্তর-পশ্চিমে চট্রগ্
বান্দরবান ভ্রমন নিয়ে কিছু কথা
বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে একটি হলো বান্দরবান। বান্দরবানের দক্ষিণ-পশ্চিমে কক্সবাজার, উত্তর-পশ্চিমে চট্রগ্রাম জেলা, উত্তরে রাঙামাটি ও পুর্বে মায়ানমার। ভৌগলিক কারণেই বান্দরবানে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। পাহাড়, নদী ও ঝর্ণার মিলনে অপরূপ সুন্দর বান্দরবান জেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবারিত সবুজের সমারোহ আর মেঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে যার আছে সে বাংলাদেশের পাহাড়ী কন্যা বান্দরবান ঘুরে আসতে পারেন। এখানে পাবেন বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থান সমুহের বিবরণ বান্দরবান ভ্রমন। বান্দরবান জেলায় দেখার মত কি আছে, কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবে ও খরচ কত ইত্যাদি ভ্রমন কাহিনী এই সব কিছু নিয়েই আমাদের বান্দরবান ভ্রমণ।
বান্দরবান ভ্রমন পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে স্থান। দেশ বিদেশ থেকে প্রতিদিনিই হাজার হাজার পর্যটকের ভীরে মুখরিত হয় বান্দরবন। বান্দরবান ভ্রমণ নিয়ে আমরা আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব বান্দরবান ভ্রমণ কাহিনী। অনেকেই আছেন যারা এখনো যাননি বা কেউ কেউ এবারের ছুটিতে যাবার চিন্তা ভাবনা করছেন তাদের জন্য আজকের এই আয়োজন। মিলিয়ে নিন বান্দরবনে গিয়ে কি কি দেখবেন। যেন একটাও অদেখা না রয়। এখানকার সব কিছুই নজরকারা তাই কোন একটি অদেখা রয়ে গেলে সব দেখেও না দেখার মত হয়ে যাবে।
যান্ত্রিক জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার ফাঁকে অবকাশ যাপনে কিছুটা প্রশান্তি পেতে ঘুরে আসুন পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে। বান্দরবানের পাহাড়ে, কত রং আহা রে- ছন্দটির সঙ্গে বান্দরবানের অপার সৌন্দর্যের কতটা মিল তা শুধু গিয়েই উপলব্ধি করা সম্ভব।পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার মধ্যে একটি বান্দরবান। যেখানে রয়েছে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। প্রকৃতি যেন সাজিয়েছে আপন মনের মাধুরি মিশিয়ে। তাই সবুজে মোড়ানো প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয, অবারিত সবুজের সমারোহ এবং মেঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে হলেই ঘুরে আসুন পাহাড়ি কন্যা বান্দরবানে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে এক অপার সমাহার বান্দরবান। যেখানে প্রকৃতি নিজ ঐশ্বর্যকে ঢেলে দিতে কৃপণতা করেনি। পাহাড়ি এ জেলায় রয়েছে অসংখ্য হ্রদ, ঝরনা, নদী। এখানকার জীববৈচিত্র্য এবং তাদের ঐতিহ্যপূর্ণ বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি যেকোন সংস্কৃতি মনা ও ভ্রমণপিয়াসু মানুষকে কাছে টানে সহজেই।
লেকে ভ্রমণ করতে রয়েছে ভাড়ায় চালিত প্যাডেল বোট আর নৌকা। এছাড়া মিনি চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক, সাফারী পার্ক, ঝুলন্ত ব্রিজ, পিকনিক স্পট এবং আকাশে ঝুলে আছে রোপওয়ে কার। যেখানে সবুজ প্রকৃতি, লেকের স্বচ্ছ পানি আর পাহাড়ের চুঁড়ায় চড়ে দেখা যাবে পাহাড়ি বান্দরবানের নজরকাড়া দৃশ্য।অবকাশ যাপনের জন্য রয়েছে জেলা প্রশাসনের একটি সুন্দর রেস্ট হাউজ। রাত্রিযাপনের জন্য ৪টি কক্ষ রয়েছে। প্রতি কক্ষ দৈনিক ২০০০/- টাকা ভাড়ায় পাওয়া যাবে।নীলাচলসমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬শ’ ফুট উঁচু এই জায়গায় বর্ষা, শরৎ কি হেমন্ত— তিন ঋতুতে ছোঁয়া যায় মেঘ।এছাড়া এখানে দাঁড়িয়ে দূর থেকে দেখা যায় বান্দরবান শহর আর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদী। বান্দরবান ভ্রমণে বান্দরবান জেলা পরিষদের উদ্যোগে গড়ে তোলা মনোরম এই পর্যটন কেন্দ্রে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন যোগ করা হয়েছে একটি রিসোর্ট। এখন থেকে তাই এখানে বেড়ানোর পাশাপাশি পর্যটকরা রাত যাপনের সুযোগ পাবেন।
বান্দরবান জেলায় দেখার মতো কিছু জায়গা
বান্দরবান জেলায় দেখার মতো জায়গাগুলো হলা: ১। নীলগিরি, ২। স্বর্ণমন্দির, ৩। মেঘলা, ৪। শৈল প্রপাত, ৫। নীলাচল, ৬। মিলনছড়ি, ৭। চিম্বুক, ৮। সাঙ্গু নদী, ৯। তাজিনডং, ১০। কেওক্রাডং, ১১। জাদিপাই ঝরণা, ১২। বগালেক, ১৩। মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, ১৪। প্রান্তিক লেক, ১৫। ঋজুক জলপ্রপাত, ১৬। নাফাখুম জলপ্রপাত। এছাড়া বান্দরবানে কয়েকটি ঝিরি রয়েছে। যেমনঃ চিংড়ি ঝিরি, পাতাং ঝিরি, রুমানাপাড়া ঝিরি।
বিভিন্ন জায়গা থেকে বান্দরবান ভ্রমণ করার উপায়
বান্দরবান ভ্রমণ করতে গিয়ে এতগুলো জায়গা একসাথে দেখা সম্ভব নয়। তবে বান্দবান শহরে থেকে, আশেপাশের ৭টি এলাকা- স্বর্ণ মন্দির, নীলগিরি, মেঘলা, নীলাচল, শৈল প্রপাত, মিলনছড়ি ও চিম্বুক ঘুরে আসতে পারেন। দেশের অন্যান্য যেকোন জায়গা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম, সেখানে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সোজা বান্দরবান যাওয়া যায়। আর ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান পর্যন্ত বাস সার্ভিস আছে।
ঢাকা থেকে সরাসরি: আরামবাগ থেকে শ্যামলী, ঈগল, ইউনিক বাস সার্ভিস সরাসরি বান্দরবান যায়। জনপ্রতি ভাড়া ৬০০ থেকে ৬৫০টাকা।
চট্টগ্রাম হয়ে বান্দরবান: দেশের যেকোন এলাকা থেকে বান্দরবান যাওয়ার জন্য প্রথমে চট্টগ্রাম যেতে হবে। সেখানের বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে বাস-এ করে যেতে হবে বান্দরবান। বিভিন্ন বাস সার্ভিস আছে। প্রতি ৩০ মিনিট পরপর বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
নীলগিরি

বান্দরবান ভ্রমণে গিয়ে নীলগিরি ভ্রমন না করলে বান্দরবান ভ্রমণে অতৃপ্তি থেকেই যায়। নীলগিরি (Nilgiri) কে বলা হয় বাংলার দার্জিলিং। দীগন্ত জুড়ে সবুজ পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি যে কাউকে এর রূপ দিয়ে বিমোহিত করে রাখবে। যদি সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় মেঘ ছোঁয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে নীলগিরি আপনার সেই ইচ্ছে পূরণ করবে। নীলগিরি পাহাড় চূড়াতেই রয়েছে সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর পর্যটক কেন্দ্র গুলোর একটি নীলগিরি পর্যটক কেন্দ্র। বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ২২০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের নাম নীলগিরি।
নীলগিরি থেকে চারপাশে চোখ মেলে তাকালে সারি সারি মেঘের পাহাড়ে আছড়ে পড়া ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য আপনাকে বিমোহিত করবে। নীলগিরির চূড়া থেকে পাহাড়ের সারির পাশাপাশি আকাশ পরিস্কার থাকলে আপনার চোখে পড়বে বগালেক, বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়া কেওক্রাডং, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত এবং চট্টগ্রাম বন্দর ও সাঙ্গু নদী। এছাড়াও নীলগিরির কাছের আদিবাসী গ্রাম থেকে পরিচিত হতে পারেন তাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে। নীলগিরিতে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থাকায় নিরাপত্তা নিয়ে কোন বিভ্রান্তির কারণ নেই তাই পরিবার নিয়ে অনায়াসেই ঘুরে আসতে পারেন বাংলার দার্জিলিং খ্যাত নীলগিরি। আপনার ঘুরে বেড়ানোকে সহজ ও আনন্দময় করে তোলার জন্যেই পড়ুন নীলগিরি নিয়ে সকল তথ্যের এই ভ্রমণ গাইড।

বান্দরবান থেকে নীলগিরি : বান্দরবান থেকে নীলগিরি যেতে পারবেন জীপ/চান্দের গাড়ি/মহেন্দ্র/সিএনজি অথবা লোকাল বাস দিয়ে। সবচেয়ে ভালো হয় রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে গেলে। এতে করে আপনি আশেপাশের আরও কিছু জায়গায় ঘুরে দেখতে পারবেন। যদি দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চান তাহলে বান্দরবান জীপ স্টেশন থেকে বিভিন্ন গাড়ি অনুযায়ী ৩০০০-৫০০০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া আসা সহ গাড়ি ঠিক করে নিতে হবে। চাঁন্দের গাড়ী গুলোতে ১২-১৪ জন যেতে পারবেন, ল্যান্ডক্রুজার টাইপ জীপ গুলোতে ৭-৮ জন যেতে পারবেন, ছোট জীপ আছে সেগুলোতে ৪-৫ জন থেকে পারবেন আর সিএনজিতে ৩-৪ জন। রাস্তায় কোন সমস্যা না থাকলে যেতে সময় লাগবে দুই থেক সাড়ে দুই ঘন্টার মত। নীলগিরিতে যদি মেঘের দেখা পেতে চান তাহলে আপনাকে খুব ভোরে রওনা দিতে হবে যেন ৭-৮ টার ভিতর নীলগিরি থাকতে হবে।
সদস্য সংখ্যা কম হলে কিংবা কম খরচে যেতে চাইলে লোকাল বাসে যেতে পারেন, তবে এতে সময় লাগবে বেশি। থানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে ১ ঘন্টা পর পর থানচির উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়, ভাড়া ১২০ টাকা। তবে আপনি চাইলে অন্য কোন গ্রুপ নীলগিরি যাবে তাদের সাথে যোগ হয়ে যেতে পারেন ভাড়া শেয়ার করে।
নীলগিরি যাওয়ার পথে নিরাপত্তার জনিত কারণে সেনা চেকপোষ্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। সাধারণত বিকেল ৫ টার পর থেকে নীলগিরির উদ্দেশে আর কোন গাড়ীকে যেতে দেয়া হয় না তাই ভ্রমণের পূর্বে সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে যাবার জন্যে পর্যটকদের কাছ থেকে টিকেট বাবদ জনপ্রতি ৫০ টাকা এবং গাড়ির জন্য আলাদা ৩০০ পার্কিং ফি নেয়া হয়।
নীলাচল

বান্দরবান ভ্রমণে গিয়ে নীলাচল ভ্রমন না করলে বান্দরবান ভ্রমণে অতৃপ্তি থেকেই যায়। নীলাচল (Nilachal) পর্যটন কেন্দ্র বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট উচ্চতায় টাইগার পাড়ায় পাহাড়ের উপর অবস্থিত। নীলাচলে রয়েছে আকাশ, পাহাড় আর মেঘের অপূর্ব মিতালী আর তুলনাহীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। সকালে মেঘের ভেলার খেলা আর বিকেলের সূর্যাস্ত এই দুইটি সময়ই নীলাচল তার পূর্ণ রূপ ধারণ করে। নীলাচল থেকে পুরো বান্দরবান শহরকে দেখা যায় আবার মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে দূরের কক্সবাজার সাগর সৈকত হাতছানী দেয় পর্যটকদের। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তা সমানভাবে বিমোহিত করে পর্যটকদের। নীলাচলে বর্ষা, শরৎ আর হেমন্তকালে হাতের কাছে মেঘ খেলা করে। নীলাচলের একেক স্থান থেকে একেক রকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।
আগত পর্যটকদের নীলাচলের রূপ অবলোকন করার সুবিধার জন্য এখানে রয়েছে কয়েকটি বিশ্রামাগার ও রিসোর্ট। নীলাচলে পর্যটকরা সাধারণত সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকতে পারেন। পরবর্তীতে শুধুমাত্র যারা রিসোর্টে রাত্রি যাপন করেন তাদেরই থাকার অনুমতি মিলে। যদি মেঘের দেখা পেতে চান তবে খুব সকালে যেতে হবে নীলাচল।
নীলাচল যাবার উপায়: ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে বান্দরবান যাওয়া যায়। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে শ্যামলি, সৌদিয়া, এস. আলম, ইউনিক, সেন্ট মার্টিন পরিবহন ও হানিফ ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি এসব বাসের ভাড়া যথাক্রমে নন এসি ৫৫০ টাকা ও এসি ৯৫০ টাকা। রাত ৯-১০টায় রওনা দিলে সকাল ৭টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন বান্দরবান। এছাড়া ট্রেন বা এয়ারে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বান্দরবান যেতে পারবেন।
চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে পূবালী ও পূর্বানী নামের দুটি বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ দুটি বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়া লাগে। বান্দরবান শহর থেকে নীলাচল যাওয়ার জন্য সিএনজি, চাঁদের গাড়ি ও জীপ পাওয়া যায়। নীলাচলে অবস্থানের সময় অনুযায়ী অটো রিকশায় যাওয়া আসার জন্য ভাড়া লাগে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা আর, জীপ ৮০০-১২০০ টাকা আর চাঁদের গাড়ি ভাড়া করতে ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা লাগে। যে পরিবহনেই যান একটু দরদাম করে নিবেন ঠিকমতো।
বগালেক

বগাকাইন লেক বা বগালেক (Bogalake) বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে কেওক্রাডং পাহাড়ের কোল ঘেসে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১২০০ ফুট উচ্চতায় ২০০০ বছর আগে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট এক হ্রদ। ভূ-তত্ত্ববিদগনের মতে এটি মৃত কোন আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ অথবা উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে এই লেক তৈরী হয়েছে। বগালেক অনেকের কাছে ড্রাগন লেক বলে পরিচিত। সকাল, সন্ধ্যা কিংবা রাতে রূপের ভিন্ন ভিন্ন শোভায় মোহিত হয় এখানে আসা পর্যটকরা। যাত্রাপথের সমস্ত ক্লান্তি এক নিমিষেই দূর করে দেয় লেকে শান্ত শীতল জল। পাহাড়ের কোলে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে আকাশ, পাহাড় আর নীল জলের পসরা সাজিয়ে বগালেক তাই পর্যটকদের কাছে হয়ে উঠেছে অনন্য। বান্দরবান ভ্রমণে গিয়ে বগালেক ভ্রমণ না করলে বান্দরবান ভ্রমণে অতৃপ্তি থেকেই যায়।
বর্ষায় বগালেক ভ্রমণ করা বেশ কষ্ট সাধ্য তাই শীতকালে বগালেকে যাওয়া সুবিধাজনক। তবুও এডভ্যাঞ্চার প্রিয় পর্যটকরা অনেকেই কষ্ট স্বীকার করে বগালেকের সৌন্দর্য্যে মোহিত হতে আসে। বান্দরবান থেকে বগালেক আসার পুরোটা পথ পাহাড়েরে আঁকাবাঁকা পাহাড়ের পথ। এই পথের সৌন্দর্য আপনাকে আকৃষ্ট করবে, ভ্রমণের ক্লান্তি দূরে থাকবে।
বগালেক যাবার উপায়: দেশের যে প্রান্তেই থাকেন আপনাকে প্রথমে বান্দরবান আসতে হবে বগালেক যাবার জন্যে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে এস. আলম, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলি, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি এসব বাসের ভাড়া যথাক্রমে নন এসি ৫৫০ টাকা ও এসি ৯৫০-১৫০০ টাকা। ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান যেতে সময় লাগে ৮-১০ ঘন্টা।
ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম গামী সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিতা, মহানগর গোধূলি এইসব ট্রেনে করে চট্রগ্রাম যেতে পারবেন। শ্রেনীভেদে ভাড়া ৩৫০ থেকে ১২০০টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে আকাশ পথে সরাসরি চট্রগ্রাম আসতে পারবেন।
চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে পূবালী ও পূর্বানী নামের দুটি বাদ বান্দারবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ দুটি বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়া লাগে। চট্রগ্রামের ধামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়ায় বাসে করে বান্দরবান আসতে পারবেন।
মারায়ন তং

বান্দরবান জেলার আলীকদম থানার মিরিঞ্জা রেঞ্জে অবস্থিত একটি পাহাড়ের নাম মারায়ন তং (Marayan Dong)। এই পাহাড় আরও কয়েকটি নামে পরিচিত যেমন; মারায়ান তং, মারায়ং তং, মেরাই থং জাদি, মারাইং ডং ইত্যাদি। প্রায় ১৬৪০ ফুট উচ্চতার এই পাহাড়ের চূড়ায় আছে একটি বৌদ্ধ উপাসনালয়। খোলা প্রকৃতির মাঝে বৌদ্ধের বিশাল মূর্তি এই জায়গাটিকে আরও গাম্ভির্যময় করে তোলেছে। দিগন্তজোড়া পাহাড় আর নিচে সাপের মতো বয়ে চলা মাতামুহুরী নদী, ফসলের ক্ষেত সবকিছু মিলিয়ে এ যেন এক কল্পনার রাজ্য।
ত্রিপুরা, মারমা, মুরং সহ বেশিকিছু আদিবাসীর বসবাস এই মারায়ন তং পাহাড়ে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে থাকা আদিবাসী পাড়াগুলো বিশেষ বৈচিত্রতা যুক্ত করেছে আলীকদমের এই পাহাড়ি সৌন্দর্যে। পাহাড়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবনযাত্রা এবং নিখাদ প্রকৃতি দুচোখ ভরিয়ে দেয় এখানে আগত পর্যটকদের। বান্দরবান ভ্রমণে গিয়ে মারায়ন তং ভ্রমণ না করলে বান্দরবান ভ্রমণে অতৃপ্তি থেকেই যায়।
মারায়ন তং যাবার উপায়: রাজধানী ঢাকা হতে সরাসরি আলীকদমগামী বাস সার্ভিস রয়েছে। আলীকদম বাসস্ট্যান্ড পৌঁছার আগেই আবাসিক নামক জায়গায় আপনাকে নেমে যেতে হবে। সেখান থেকে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই মারায়ং তং যাবার রাস্তা দেখিয়ে দিবে। সেখান থেকে হেটে মারায়ং তং পাহাড় চূড়ায় পৌঁছতে ২ ঘন্টার মত সময় লাগবে। তবে কারও কারও সময় আরও বেশি লাগতে পারে।
সরাসরি আলিকদমের বাস ছাড়াও কক্সবাজার গামী কোন বাসে করে কক্সবাজারের চকোরিয়ায় নেমে সেখান থেকে লোকাল বাস বা জীপে করে আলীকদম যাওয়া যায়, লোকাল ভাড়া ৭০-৮০ টাকা। চাইলে জীপ রিসার্ভ নিয়ে আলীকদম যেতে পারবেন। জীপ রিসার্ভ করতে ভাড়া লাগবে প্রায় ১০০০-১২০০ টাকা। এক জীপে ১০-১২ জন যাওয়া যায়।
জাদিপাই ঝর্ণা

বান্দরবান জেলায় বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কেওক্রাডং পাহাড় থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে জাদিপাই ঝর্ণার (Jadipai Waterfall) অবস্থান। কেওক্রাডাং, জংছিয়া ও জাদিপাই এই ৩টি পাহাড়ি ঝিরির স্বচ্ছ পানির ধারা একত্রে মিলিত হয়ে প্রায় ২০০ ফুট উপর থেকে কালো পাথরের গা বেয়ে জাদিপাই ঝর্ণা রূপে সাংঙ্গু নদীর সাথে এসে মিশেছে। জাদিপাই বাংলাদেশের প্রশস্ততম ঝর্ণাগুলোর মধ্যে অন্যতম। জলপ্রপাতের চারিদিকে ছড়ানো আছে সবুজে মোড়ানো পাহাড় এবং প্রকৃতির নির্মল মাদকতা। যার বুক চিরে স্বশব্দে বয়ে চলা জাদিপাই আপন ভাবধারায় বান্দরবানের ঝর্ণার রাণী রূপে প্রাবাহমান।
জাদিপাই ঝর্ণা যাবার উপায়: জাদিপাই ঝর্ণায় যেতে হলে আপনাকে বান্দরবানের রুমা উপজেলা থেকে বগালেক হয়ে কেওক্রাডং পাহাড় চূড়া হয়ে তারপর যেতে হবে। বান্দরবান জেলা শহর হয়ে রুমা বাজার চলে আসুন। বান্দরবান থেকে রুমা বাজারের দূরত্ব প্রায় ৪৮ কিলোমিটার। বান্দরবানের রুমা বাস স্ট্যান্ড হতে লোকাল বাস কিংবা বান্দরবান শহরের জীপ স্টেশন থেকে জীপ/চাঁন্দের গাড়ি নিয়ে রুমা বাজার যেতে পারবেন। কিংবা বান্দরবান থেকে গাড়ি রিসার্ভ করে সরাসরি বগালেক পর্যন্ত যেতে পারবেন।
বগালেক থেকে ট্রেকিং করে কেওক্রাডং যেতে হবে। কেওক্রাডং পাহাড় থেকে ১৫-২০ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত বান্দরবানের সব চেয়ে উঁচু গ্রাম পাসিং পাড়ার খাড়া পথ ধরে মিনিট ত্রিশেক হাঁটার পর জাদিপাই পাড়া হয়ে আরও ৩০-৪০ মিনিট হাটলে তবেই জাদিপাই ঝর্ণায় পৌঁছানো যায়। পাসিং পাড়া আর জাদিপাই পাড়ার মাঝখানের পথ বেশ খাড়া ও বিপদসংকুল। বান্দরবান ভ্রমণে গিয়ে জাদিপাই ঝর্ণা ভ্রমণ না করলে বান্দরবান ভ্রমণে অতৃপ্তি থেকেই যায়।
বান্দরবানে পর্যটন স্পটগুলোতে আসলে কোথায় থাকবেন?
বান্দরবান ভ্রমণে গিয়ে আপনাকে আর থাকার জন্য কোন চিন্তা করতে হবে না। বান্দরবান ভ্রমণে গেলে কারন নিচে আমরা আপনার জন্য ভালো কিছু আবাসিক হোটেল সাজেস্ট করব।
হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবানে প্রবেশ করতেই দেখতে পাবেন শহরের সবচেয়ে বড় আবাসিক হোটেল হিল ভিউ। শহরের কাছেই এ হোটেলের ভাড়া রুমপ্রতি ১০০০-৪০০০ টাকা। ফোন: ০৩৬১-৬৩০৪৫।
পর্যটন মোটেল: পর্যটন স্পট মেঘলার পাশেই পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত পর্যটন মোটেল। যার ভাড়া রুম প্রতি ৮৫০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। ফোন: ০৩৬১-৬২৭৪১ এবং ০৩৬১-৬২৭৪২।
হলি ডে ইন: চারিদিকে পাহাড় আর প্রাকৃতিক লেকের কাছাকাছি থাকতে চাইলে যেতে পারেন মেঘলার কাছেই অবস্থিত হলি ডে ইন এ। যার ভাড়া রুম প্রতি ১৫০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত। ফোন: ০৩৬১-৬২৮৯৬
ভেনাস রিসোর্ট: বান্দরবানের মেঘলা এলাকায় অবস্থিত ভেনাস রিসোর্ট। যেখানে রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় ৫টি আধুনিক কটেজ। এছাড়াও রয়েছে ভেনাস চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, যেখানে দেশি-বিদেশি মজাদার সব রকমের খাবার পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে শৈল্পিক ছোঁয়া এবং একাধিক ছোটবড় ভাস্কর্যে সাজানো হয়েছে ভেনাস রিসোর্ট। ফোন- ০৩৬১-৬৩৪০০, ০১৫৫২৮০৮০৬০

হোটেল প্লাজা: এটি বান্দরবানের অন্যতম আধুনিক আবাসিক হোটেল। বান্দরবান শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এ হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন ১০০০-৪০০০ টাকার মধ্যে। ফোন: ০৩৬১-৬৩২৫২।
হিলসাইড রিসোর্ট: চিম্বুক যাওয়ার পথে মিলনছড়ি এলাকায় পাহাড়ের বুকে গড়ে ওঠা এ রিসোর্ট বান্দরবানের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট হিসেবে পরিচিত। যেখানে বসে পাহাড়, নদী আর মেঘের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন সহজেই। যার ভাড়া রুম প্রতি ১৫০০-৪০০০ টাকার মধ্যেই। ফোন: ০১৫৫৬৫৩৯০২২, ০১৭৩০০৪৫০৮৩।
সাকুরা হিল রিসোর্ট: চিম্বুক রোডের মিলনছড়ি এলাকার কাছাকাছি এ রিসোর্ট অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। প্রাকৃতিক ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশে থাকতে চাইলে এ রিসোর্ট এর কোন বিকল্প নেই। যার ভাড়া রুম প্রতি ১৫০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত।
হোটেল ফোর স্টার: এটি বান্দরবান বাজারে অবস্থিত। রুম প্রতি ভাড়া ৩০০-১২০০ টাকা। ফোন:-০৩৬১-৬৩৫৬৬, ০১৮১৩২৭৮৭৩১,০১৫৫৩৪২১০৮৯।
হোটেল থ্রী স্টার : এটি বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত। এটি ৮/১০ জন থাকার মতো ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট। প্রতি নন এসি ফ্ল্যাট-২৫০০ টাকা, এসি-৩০০০ টাকা। ফোন:- ০১৫৫৩৪২১০৮৯।
পর্যটকদের জন্য জরুরী কিছু ফোন নাম্বার
পর্যটকদের জন্য জরুরী এবং প্রয়োজনীয় কিছু ফোন নাম্বার: ওসি, বান্দরবান সদর থানা ০১৭৩০-৩৩৬১৬৬, ০৩৬১-৬২২৩৩, ওসি, রুমা থানা ০১৮২০-৪২৫৬৪৩, ওসি, থানছি থানা ০১৫৫৭-২৫৬৯৫৮, ওসি, লামা থানা ০১৮২০-৪২৫৬৪৪, বান্দরবান সদর হাসপাতাল ০৩৬১-৬২৫৪৪, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ০৩৬১-৬২২২২, বান্দরবান প্রেসক্লাব -০৩৬১-৬২৫৪৯।বিশেষ সতর্কতাসবশেষে কিছু বিষয় ভ্রমণকারীদের অবশ্যই মেনে চলা জরুরি। বান্দরবানের সবুজে ঘেরা পাহাড়, নদী, হ্রদ, ঝর্ণার নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের টানে সেখানে সারা বছর, বিশেষ করে বর্ষা ও শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। পাহাড়ি এলাকা, ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা, নদী, ঝর্ণা। সেখানে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে সামান্য অবহেলায় পুরো ভ্রমণের আনন্দ মাটিতে মিশে না যায়। তাই বান্দরবানে আসার আগেই কিছু জরুরি মোবাইল/ফোন নাম্বার সংরক্ষণ করুন এবং দূর্গম পর্যটন স্পটগুলোতে অবশ্যই গাইড সঙ্গে নিতে ভুল করবেন না।
COMMENTS