আমরা যারা শিক্ষার্থী সবারই পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট একটি রুটিন দরকার। সে প্রথম শ্রেনী থেকে ভার্সিটি যেখানকার শিক্ষার্থীই হই না কেন। একটি পড়ার রুটিন থা
আমরা যারা শিক্ষার্থী সবারই পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট একটি রুটিন দরকার। সে প্রথম শ্রেনী থেকে ভার্সিটি যেখানকার শিক্ষার্থীই হই না কেন। একটি পড়ার রুটিন থাকলে, সময়ের অপব্যহার কম হয়। অনেকে আছেন পড়ার রুটিন খাতায় লিখে টেবিলের সামনে লাগিয়ে রাখে। আবার কেউ আছে নিজের ব্রেইনেই তৈরি করে রাখে।
যদিও বুদ্ধিমানের কাজ হলো, টেবিল বা চোখের সামনে পরে এমন স্থানে রুটিন তৈরি করে লাগিয়ে রাখা। কেননা প্রতিবার রুটিনে চোখ পরার সাথে সাথে আপনার ব্রেইন সিগনাল কি করতে হবে। ফলে সময়ের অপব্যবহার কম হবে। মোটকথা আপনার প্রডাক্টিভিটি, টাইম মেনেজমেন্ট, দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখতে এমনকি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে সহায়তা করবে।
সুতরাং কীভাবে একটি পড়ার রুটিন তৈরি করবেন এই নিয়েই আজকের আলোচনা। বলে রাখা ভালো দৈনিক পড়ার রুটিন তৈরির নিয়ম দেয়ার পাশাপাশি আমরা একটা ডেমো রুটিন ও ১০ ঘন্টা পড়ার রুটিন শেয়ার করবো।
পড়ার রুটিন তৈরির নিয়ম
নিচে আমি কয়েকটি টিপস এবং নিয়ম গুলোর বিষয়ে বলবো যেগুলোর মাধ্যমে একটি সেরা রুটিন আপনি নিজের জন্য তৈরি করে নিতে পারবেন। তবে রুটিন হিসেবে চলার জন্য সবচেয়ে আগে আপনাকে নিজের মনের মধ্যে পড়াশোনার ইচ্ছে জাগিয়ে তুলতে হবে।

পড়ার রুটিন তৈরির নিয়ম
পড়ার রুটিন বানানোর সময় রিভিসন করার জন্য অন্তত ৩০ মিনিট সময় প্রতিদিনের রুটিনে রাখা দরকার। কারণ আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ে বা সাবজেক্টের বই পড়ে থাকি। তাই পরাগুলো যদি পরীক্ষার সময় ভালো করে মনেই রাখতে না পারি তাহলে পড়ে কি লাভ হবে।
পড়ার রুটিন কেমন হওয়া উচিত
আপনাদের বোঝার সুবিধার জন্য আমি এখানে একটি ডেমো রুটিন দিয়ে দিচ্ছি। এটা স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। যাদের সকালে ক্লাস থাকে।
নং | কাজ | সময় | সর্বমোট সময় |
---|---|---|---|
১. | প্রার্থনা | ৫:০০ – ৫:৪৫ | ৪৫ মিনিট |
২. | খাওয়া, গোসল করা, স্কুলের জন্য তৈরি হওয়া | ৬:০০ – ৭:০০ | ১ ঘন্টা |
৩. | রাতের পড়াগুলো রিভাইজ দেয়া | ৭:০০ – ৮:৩০ | ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট |
৪. | স্কুল/ কলেজ/ ভার্সিটি | ৮:৩০ – ৪:০০ | ৮ ঘন্টা ৩০ মিনিট |
৫. | খাওয়া-দাওয়া, ফ্রেশ হওয়া | ৪:০০ – ৪:৩০ | ৩০ মিনিট |
৬. | খেলাধুলা, হাঁটাহাঁটি | ৪:৩০ – ৫:৩০ | ১ ঘন্টা |
৭. | পড়তে বসা (মিনিমাম ৩টি বিষয় শেষ করা) | ৬:০০ – ৮:৩০ | ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট |
৮. | রাতের খাবার খাওয়া | ৮:৩০ – ৯:০০ | ৩০ মিনিট |
৯. | পড়তে বসা (মিনিমাম ২টি বিষয় শেষ করা) | ৯:০০ – ১০:৩০ | ২ ঘন্টা |
১০. | ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়া | ১০:৩০ – ৫:০০ | ৭ ঘন্টা + |
তো অনেকটা এভাবে রুটিন তৈরি করে নিতে পারেন। আর কখনোই একটানা পড়বেন না। এক ঘন্টা পর পর ১০ মিনিটের বিরতি নিবেন।
সিলেবাস অনুযায়ী পড়ার রুটিন তৈরি করা
পড়ার রুটিন বানানোর সময় প্রথমে প্রত্যেকটি বিষয়ের বা সাবজেক্ট এর একটি লিষ্ট তৈরি করে নিতে হবে। এরপর প্রত্যেকটি সাবজেক্ট এর সিলেবাস আলাদা আলাদা পাতায় লিখে নিতে হবে যাতে একটি সাবজেক্ট এর সাথে আরেকটি সাবজেক্ট মিশ্রিত না হয়ে যায়।
সব বিষয়ের সিলেবাস গুলো লিখা হয়ে যাওয়ার পর দেখতে হবে কোন সিলেবাসে কি কি টপিক রয়েছে এবং তারপর সেগুলো নোট করে নিতে হবে। এতে পড়ার সময় বার বার টপিক খুঁজে সময় নষ্ট করতে হবেনা।
পড়ার সময় যদি সিলেবাস নিয়ে বসা হয় তখন আধা সময় এগুলোতেই চলে যায় কিন্তু আগের থেকে যদি সব নোট করা থাকে তখন আমাদের জানা থাকে কোন বিষয়ে কি সিলেবাস রয়েছে। ফলে পুরো সময়টুকু পড়া শিখতে দেওয়া যায়।
শিক্ষার্থীর ১০ ঘন্টা পড়ার রুটিন
নিচের পড়ার রুটিনটি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকের শিক্ষার্থী তারা বিভাগের বিষয়গুলোতে নিজেদের বিষয় যোগ করে নিবেন। যেমন: পদার্থ বিজ্ঞানের স্থানে হিসাব বিজ্ঞান। এমন আরকি। কারও যদি উল্লেখিত রুটিনের ছবি বা PDF ডাউনলোড লিংক প্রয়োজন হয় তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানান।
সময় | কাজের বিবরণ | মোট পড়ার সময় |
---|---|---|
৭:০০ – ৭:৩০ | ফ্রেস হওয়া | |
৭:৩০ – ৮:৩০ | সাধারণ গনিত | ১ ঘন্টা |
৮:৩০ – ৯:০০ | ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা | ৩০ মিনিট |
৯:০০ – ৯:৩০ | নাস্তা ও বিশ্রাম নেয়া | |
৯:৩০ – ১০:০০ | বাংলা ১ম পত্র | ৩০ মিনিট |
১০:০০ – ১০:৩০ | বাংলা ২য় পত্র | ৩০ মিনিট |
১০:৩০ – ১১:৩০ | ইংরেজি ১ম পত্র | ১ ঘন্টা |
১১:৩০ – ১২:০০ | বিশ্রাম নেয়া | |
১২:০০ – ১:০০ | ইংরেজি ২য় পত্র | ১ ঘন্টা |
১:০০ – ২:০০ | গোসল, নামাজ, দুপুরের খাবার | |
২:০০ – ২:৩০ | হালকা ঘুম | |
২:৩০ – ৩:৩০ | উচ্চতর গণিত | ১ ঘন্টা |
৩:৩০ – ৪:০০ | বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | ৩০ মিনিট |
৪:০০ – ৫:০০ | পদার্থ বিজ্ঞান | ১ ঘন্টা |
৫:০০ – ৬:৩০ | নামাজ, খেলাধূলা, নামাজ | |
৬:৩০ – ৭:৩০ | জীববিজ্ঞান | ১ ঘন্টা |
৭:৩০ – ৮:৩০ | রসায়ন | ১ ঘন্টা |
৮:৩০ – ৯:০০ | নামাজ, রাতের খাবার | |
৯:০০ – ১০:০০ | সারাদিনের পড়া রিভাইজ | ১ ঘন্টা |
১০:০০ | ঘুমানো |
পড়ার রুটিন তৈরি করার উপকারিতা
পড়ার রুটিন তৈরি করলে আপনি অনেক সুবিধা পাবেন। এবং নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে খুব সহজেই শিখে নিতে পারবেন। পড়ার রুটিন তৈরি করার উপকারিতা গুলি দেখে নিন।
- আপনি কম সময়ে এবং খুব সহজে একটি বিষয়ের উপর মন লাগাতে পারবেন
- আপনি সামাজিক শারীরিক এবং অধ্যায়ন জীবনকে আলাদাভাবে সময় দিতে পারবেন
- আপনি শান্ত থাকতে পারবেন
- আপনার মন দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকবে
- সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি হবে
- যেকোনো সম্পর্ক সময়ের সাথে পরিচালনা করতে পারবেন
- পড়াশোনায় উন্নতি লাভ করবেন।
পড়ার রুটিন কোথায় রাখবেন?
অনেকে রুটিন তৈরি করেন। ঘন্টা খানেক পড়ে দেখা গেল খুঁজে পেলেন না। তো, কেউ আবার ব্যাগের মধ্যে রেখে দেন। কেউবা ভাঁজ করে রেখে দেন বইয়ের মধ্যে। তো এভবে করলে রুটিন ফলো করা যাবে না।
আরও পড়ুনঃ প্রত্যয়ন পত্র কি? প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম
পড়াশোনাটা যেহেতু পড়ার টেবিলে হচ্ছে, তাই রুটিনটাকেও রাখতে হবে টেবিলে। আবার টেবিলের পাশে লাগোয়া দেয়ালেও ঝুলিয়ে রাখে পারেন। তবে এমন স্থানে রাখতে হবে, যাতে এটা চোখে পড়ে সবসময়।
১. শান্ত জায়গায় পড়াশোনা করুন
রুটিন ফলো করার সময় আপনি এমন জায়গায় পড়াশোনা করুন যেখানে আপনাকে কেউ বিরক্ত করবে না। দরকার হলে আপনি গেট বন্ধ করে ঘরের মধ্যে পড়াশোনা করতে পারেন।
যত নিরিবিলি জায়গায় রুটিনমাফিক পড়াশুনা করবেন তত বেশি আপনি বিষয়গুলি, কম সময়ের মধ্যে বুঝতে পারবেন।
২. পড়াশোনার সময় মোবাইল দূরে রাখুন
পড়াশোনা করার সময় মোবাইল দূরে সরিয়ে রাখুন। কারণ মোবাইল হাতের কাছে থাকলে সর্বদা ঘটতে ইচ্ছা করবে। যার কারণে আপনি পড়াশোনায় মন লাগাতে পারবেন না।
পড়ার রুটিন বানানোর নিয়ম নিয়ে পরিশেষ
উপরের ইনফরমেশন থেকে পড়ার রুটিন বানানোর নিয়ম এবং কিভাবে পড়ার রুটিন তৈরি করতে হয় এই সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। আপনি যদি এইভাবে পড়াশোনা করতে চান তাহলে আজকেই একটি স্টাডি টাইম টেবিল বানিয়ে ফেলুন।
এবং এইভাবে পড়াশোনা চালিয়ে গেলে আপনি দেখবেন আপনি আগের থেকে অনেক ভালো ভাবে যেকোন বিষয় সম্পর্কে শিখতে ও জানতে পারছেন। এবং নির্দিষ্ট বিষয়ে অধ্যয়ন করতে, আপনার সময়ও কম লাগছে
COMMENTS
Give me the reading routine pdf.