জার্মান শব্দ ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম থেকে ইকেজি বা ইসিজি নাম আসে। ইসিজি হলো হৃৎপিণ্ডের রোগ শনাক্তকরণ একটি পদ্ধতি। যাতে মানব দেহের হৃৎপিণ্ডের কার্যকলাপ ক
জার্মান শব্দ ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম থেকে ইকেজি বা ইসিজি নাম আসে। ইসিজি হলো হৃৎপিণ্ডের রোগ শনাক্তকরণ একটি পদ্ধতি। যাতে মানব দেহের হৃৎপিণ্ডের কার্যকলাপ কার্ডিওগ্রাফের সাহায্যে ইলেক্ট্রনিক্স উপায়ে নিরূপণ ও ধারণ করা হয়। কার্ডিওগ্রাফ মানব দেহের হৃৎপিণ্ডের পেশীসমূহের কার্যকলাপ সংশ্লিষ্ট বৈদ্যুতিক প্রবাহের একটি ধারাবাহিক রেকর্ড ধারণ করে।
ইসিজি কি?
ইসিজির ফলে চিকিৎসকরা হার্ট অ্যাটাক, হৃদরোগ, কোনো অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা বর্ধিত হৃৎপিণ্ড যা কিনা হার্ট ফেইলিওর এর কারণ হতে পারে, সেগুলি শনাক্ত করতে ব্যবহার করেন। ইসিজি হল একটি নিরাপদ, দ্রুত এবং ব্যথাহীন পরীক্ষা পদ্ধতি, যা ডাক্তারদের সাহায্য করে নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে:
- আপনার হৃদপিন্ডের ছন্দ পরীক্ষা করতে
- হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করতে।
- হৃৎপিণ্ডের পেশীতে দুর্বল রক্ত প্রবাহ নির্ণয় করে, যা ইস্কেমিয়া নামেও পরিচিত।
- অন্যান্য কার্ডিয়াক অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করুন, যেমন হৃৎপিণ্ডের পেশীর পুরু হয়ে যাওয়া।
- ইলেক্ট্রোলাইট স্তরের প্রধান অস্বাভাবিকতাগুলি সনাক্তকরণ, যেমন কম বা উচ্চ ক্যালসিয়াম মাত্রা, উচ্চ পটাসিয়াম মাত্রা ইত্যাদি।

একটি ইসিজি মেশিন হল প্রতিটি অস্ত্রোপচার বিভাগের এবং অ্যাম্বুলেন্সের একটি অতি সাধারণ সরঞ্জাম। কিছু স্মার্ট গ্যাজেটেও আজকাল ইসিজি পরীক্ষার সুবিধা রয়েছে।
ইসিজি কেন করা হয়?
ইসিজি দ্বারা রোগীর প্রতিটি হৃৎস্পন্দন পর্যবেক্ষণ করা হয়। হৃদরোগের সমস্যায় রোগীর হৃৎপিন্ডের ইলেকট্রিকাল এক্টিভিটি পরিবরর্তন হয়ে যায়। তবে ইসিজি হৃদরোগের জন্য একটি প্রাথমিক লেবেলের টেস্ট। ইসিজিতে অস্বাভাবিক কিছু দেখা গেলে তখন “ইকো” ও “ইটিটি” এই কনফারমেশন টেস্ট গুলো করা হয়।
আরো পড়ুনঃ
মূলত ইসিজি হচ্ছে একটি নন-ইনভেসিভ পরীক্ষা। অর্থাৎ এই পরীক্ষাটি করতে আপনাকে কোন অপারেশনের মাধ্যমে শরীরের ভিতরে কিছু প্রবেশ করানোর কোন প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিকভাবে একজন রোগীকে কখন ইসিজি করা হয়ঃ
- বুকে ব্যথা হলে
- শ্বাস নিতে কষ্ট হলে
- হঠাৎ শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগলে
- হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হলে
- বুকে ধরফর বা অস্বস্তি অনূভুত হলে
- অনেক সময় ইর্মাজেন্সি ক্ষেত্রে রোগীর বেঁচে আছে কিনা বুঝার জন্য
- অনেক সময় রোগীর বয়স ৫০ এর বেশী হলে এবং হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে
ইসিজি রিপোর্ট বোঝার উপায়
সাধারণত অনেক আগে থেকেই ইসিজি রিপোর্ট গ্রাফ আকারে তৈরি করা হয়। কিন্তু বর্তমানে ইসিজির অনেক অত্যাধুনিক মেশিন এর উদ্ভাবন হয়েছে যেখানে আপনি ডিসপ্লেতেও ইসিজি রিপোর্ট দেখতে পারবেন। ইসিজি রিপোর্ট বোঝা আপনার জন্য খুব একটা সহজ হবে না।

অধিকাংশ ইসিজি টেকনিশিয়ান ডিগ্রীধারীর প্রায় সময় ইসিজি রিপোর্ট সঠিক হয় না। ইসিজি রিপোর্ট বোঝার জন্য আপনাকে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। তাই একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ভিত্তিতে ইসিজি রিপোর্ট যাচাই করেন।
- 12 লিড ইসিজি ট্রেসিং
- ইসিজি অক্ষর নির্ধারণ
- ইসিজি হার্ট রেট
- অস্বাভাবিক হার্ট স্পন্দন
- একিউট এম আর আই
- QRS কমপ্লেক্স
- ‘Q’ তরঙ্গ
- R’ তরঙ্গ
- ST বিভাগ
অস্বাভাবিক হার্ট স্পন্দন জানতে সাধারণ সাইনাস ছন্দ শেখাটা প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ে। আপনাকে প্রথমে সাধারণ ছন্দটা আয়ত্ত করা শিখতে হবে।
ইসিজি খরচ কত?
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, ৮০ টাকায় ইসিজি পরীক্ষা, ২০০ টাকায় ইকো এবং ২ হাজার টাকায় অ্যানজিওগ্রাম করা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেখানে রোগীর খরচ হয় ইসিজিতে ২৫-৩০০ টাকা, ইকো ১ হাজার টাকা, অ্যানজিওগ্রামের ক্ষেত্রে ১০-১৫ হাজার টাকা (প্রথম আলোর রিপোর্ট) ।
ইসিজির আগে রোগীর প্রস্তুতি
- দৌড়ে বা হেটে এসে অথবা শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজ করে সরাসরি ইসিজি করবেন না। এতে হার্টবিট বেশী আসতে পারে,যা সঠিক নিরীক্ষণে ব্যাঘাত ঘটাবে। তবে ইমার্জেন্সী অবস্থানে হলে ভিন্ন কথা।
- সোনা,রূপা,গোল্ড বা অন্য কোনো মেটাল রাখা যাবেনা, থাকলেও ইসিজির পূর্বে খুলে ফেলতে হবে।
- টাইট ফিট পোশাক এড়িয়ে চলতে হবে,পরীক্ষার সময় অবশ্যই ঢোলা কাপড় পড়তে হবে।
- আংটি, বেল্ট, রাবার বা অন্য বাড়তি সামগ্রী খুলে রাখতে হবে।
- ইসিজির পূর্বে ভুলেও ঠান্ডা পানি পান করা যাবেনা।
আরো পড়ুনঃ
এরপর ইসিজি নিয়ে আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে আপনি আমাদের কমেন্ট করতে পারেন বা শিরোনাম টিভির ওয়েবসাইটে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।
COMMENTS