ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

Homeব্যাংকিং

ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনান্য ব্যাংকের থেকে কিছুটা আলাদা। ইসলামী ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি আলাদা কারণ এখানে ইসলামকে কেন্দ্র করে ব্যাংকিং ধারা গড়ে

বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ভাতার আবেদন ফরম ২০২২
উপায় মোবাইল ব্যাংকিং ও উপায় এর নবযাত্রা নিয়ে বিস্তারিত 2022
ক্রেডিট কার্ড কি? ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনান্য ব্যাংকের থেকে কিছুটা আলাদা। ইসলামী ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি আলাদা কারণ এখানে ইসলামকে কেন্দ্র করে ব্যাংকিং ধারা গড়ে উঠেছে। যদিও অনেকেই ইসলামী ব্যাংককে শতভাগ ইসলামী ব্যাংক বলতে নারাজ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ইসলামি ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি চালু করেছে।

জীবনের প্রায় প্রত্যেকটি পদক্ষেপেই অর্থ বা টাকাপয়সা আমাদের খুবই দরকার। কখনো কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি চাইলেই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিতে পারে। এই আর্থিক সহযোগিতা বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি অন্যতম।

সময়ের সাথে সাথে মানুষ অনেক বেশি আধুনিক হয়েছে। প্রযুক্তির ছোঁয়া এবং সেই সাথে উন্নত জীবনধারা দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে সহজ করে তুলেছে। এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ বিচিত্র। ঠিক সেই সাথে প্রতিটি মানুষের শখ বিচিত্র। মানুষের সেই ইচ্ছা পূরণের জন্য টাকা প্রয়োজন। কিন্তু সকলের থাকে না ইচ্ছা পূরণ কিংবা নিজের চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা।

আরও পড়ুনঃ


ইসলামি ব্যাংকের সংখ্যা

ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতির জন্য বাংলাদেশের মোট ৮ টি ইসলামিক ব্যাংক রয়েছে। যথা—

  1. ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।
  2. শাহ্জালাল ইসলামি ব্যাংক।
  3. আল আরাফাহ্ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড।
  4. সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড।
  5. আইসিবি (ICB) ইসলামিক ব্যাংক।
  6. ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড।
  7. এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড।
  8. সোনালি ব্যাংক লিমিটেড।
ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি

ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি

ইসলামী ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি

ইসলামী ব্যাংক সাধারণত ছয়টি উপায়ে ঋণ প্রদান করে থাকে। প্রথম উপায়টি হল নতুন বাড়ি ক্রয়ের জন্য, এর পরবর্তী রয়েছে নতুন ফ্ল্যাট ক্রয় অথবা পুরাতন বাড়ি ক্রয় করার জন্য ইসলামী ব্যাংক লোন (ইনভেস্ট) দিয়ে থাকে।

তাছাড়াও ইসলামী ব্যাংক আরো তিনটি ভাবে ঋণ (ইনভেস্ট) প্রদান করে থাকে। নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য লোন (ইনভেস্ট), ফ্ল্যাট নির্মানের জন্য লোন (ইনভেস্ট) এবং বাড়ি সংস্কার ও বর্ধিত করার জন্য ঋণ (ইনভেস্ট) দিয়ে থাকে।

তাছাড়া ইসলামী শরীয়াহ্ অনুমোদন করে থাকে, এমন ধরণের সকল খাতেই ইসলামী ব্যাংক লোন (ইনভেস্ট) দিয়ে থাকে। যেমন:- শিল্প খাত, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, রিয়াল-এস্টেট ব্যবসা ইত্যাদি। সকল ধরণের লোন নিয়ে একটি পোস্টে একত্রে আলোচনা করা সম্ভব নয়, তাই আজকের পোস্টে আমরা শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংক হাউজ লোন (ইনভেস্ট) নিয়ে আলোচনা করব।

ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি কি?

ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতিঃ আপনি যদি সমস্ত দিক বিবেচনা করার পরে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, আপনার ইসলামী ব্যাংক থেকে ইনভেস্টমেন্ট নেয়া খুবই প্রয়োজনীয়। তাহলে আপনি নিম্নলিখিত স্টেপ ফলো করতে পারেন।

  1. ইনভেস্টমেন্ট নেয়ার জন্য প্রথমে আপনার নিকটস্থ কোন ব্রাঞ্চে গিয়ে উপস্থিত হন।
  2. তারপরে আপনি যে খাতের জন্য লোন বা ইনভেস্টমেন্ট নিতে চান সেই সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করুন।
  3. যখন আপনি ব্রাঞ্চে গিয়ে উপস্থিত হবেন তখন আপনার স্যালারি স্টেটমেন্ট এবং অন্যান্য আয়ের এর উৎস এর ডকুমেন্টস সাথে নিয়ে যাবেন।
  4. মূলত যদি গ্রাম থেকে শহরে এসে আপনি কোন বাড়ি তৈরি করতে চান, তাহলে আপনাকে আপনার ইনকাম এর সমস্ত ডকুমেন্টস তাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।
  5. আপনার মাসিক ইনকাম যদি 50 হাজারের বেশি হয়, তাহলে আপনি দশ লাখ পর্যন্ত ইনভেস্টমেন্ট নিতে পারবেন এছাড়াও ইনকামের পরিমাণ যত বেশি বাড়বে লোনের পরিমাণ তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।
  6. ঠিক একইভাবে 50 হাজার টাকার নিচে ইনকামের জন্য আপনি 10 লাখ টাকার  কম  ইনভেস্টমেন্ট আদায় করতে পারবেন।
  7. ইনভেস্টমেন্ট গ্রহণ করার পরে তাদের যে ইন্টারেস্ট এর পরিমাণ রয়েছে। আর তা হলো পরিমাণ হল 7 পয়েন্টস 60 শতাংশ।

ইসলামী ব্যাংক হোম লোন পদ্ধতি 

ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতির প্রথম বিষয় হলো ইসলামী ব্যাংক এর সঙ্গে লোন শব্দটির কোন সম্পর্ক নেই। আমরা লোন বলতে যে বিষয়টাকে বুঝি ইসলামী ব্যাংক সেটাকে ইনভেস্টমেন্ট বা বিনিয়োগ বলে। এবারে আসল কথায় আসা যাক। 

ইসলামী ব্যাংক বাড়ি নির্মাণ অথবা ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে ঋণ প্রদান করে থাকে। ইসলামী ব্যাংকে বাড়ি তৈরীর জন্য ঋণ নিতে হলে আপনাকে অবশ্যই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হতে হবে। আপনার যদি ঋণ নিয়ে সেটি পরিশোধের সক্ষমতা থাকে তাহলে ইসলামী ব্যাংকের হোম ইনভেস্টমেন্ট এর আওতায় পড়বেন।

আপনি যদি ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি ক্রয় করতে চান তাহলে আপনাকে বাড়ি ক্রয়ের মোট খরচের 60% ব্যাংক থেকে সহযোগিতা করতে পারে। সেটি হবে সর্বোচ্চ 20 লক্ষ টাকা। আর আপনি যদি নিজস্ব বাড়ি তৈরি করতে চান তাহলে ও সেটি 60% হবে। তবে টাকার পরিমাণ সর্বোচ্চ 30 লক্ষ টাকা হতে পারে। বাকি 40% এর যোগান আপনাকে নিজে থেকে দিতে হবে।  হোম লোন এর ক্ষেত্রে 9% এর কাছাকাছি ইন্টারেস্ট রেট ধরা হয়। তবে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে এটি পরিবর্তন হতে পারে। তাই এই বিষয়টি ব্যাংকে গিয়ে জেনে নেওয়া ভালো ।

বিভিন্ন খাতে ইনভেস্টমেন্ট এর পরিমান

আপনি যদি একটি বাড়ি তৈরি করার জন্য ইনভেস্টমেন্ট নিতে চান তাহলে 16.00% রিটার্ন রেট আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে; এবং ইনভেস্টমেন্ট আপনি তিন বছরের জন্য পাবেন।

এছাড়াও আপনি যে ইনভেস্টমেন্ট নিবেন সেই ইনভেস্টমেন্ট এর টাকার পরিমান আপনার অবস্থানরত এলাকা ভেদে ভিন্ন হতে পারে।

  • মহানগর শহর: 25,418,247.00 Tk
  • জেলা ও পৌরসভা: 16,945,498.00 Tk
  • অন্যান্য অঞ্চল: 8,472,749.00 T

ইসলামি ব্যাংকের লোনের ইন্টারেস্ট কত ?

সাধারণত ইসলামী ব্যাংক লোনের জন্য ১৬% ইন্টারেন্স (মুনাফা) নিয়ে থাকে। তাছাড়াও লোনের ধরণ, মেয়াদ এবং লোনের পরিমান ভেদে ইন্টারেস্ট এর পরিমান কিছুটা কম হতে পারে।

ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি
ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি

ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত

সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এক বছর চাকরির অভীজ্ঞতা থাকতে হবে। অর্থাৎ আপনার চাকরির অভীজ্ঞতা এক বছর হলে আপনি ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বাড়ি ওয়ালাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাড়ি ভাড়ার আয়ের প্রমান পত্র দেখাতে হবে। সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবী যাদের ব্যাংক একাউন্টে বেতন হয় তাদের সর্বশেষ ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর দরকার হবে।

তবে যাদের বেতন ক্যাশে হয়, তাদের আলাদা করে ভেরিফাই করা হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আর্কিটেকের জন্য সর্বনিম্ন এক বছর একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হতে হবে অর্থাৎ দেখা গেল ছয় মাস এই প্রতিষ্ঠান আরো ছয় মাস আরেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেন, এই জিনিসটা হবে না। যে কোন একটা প্রতিষ্ঠানে একটানা মিনিমাম এক বছর কর্মরত থাকতে হবে।

ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার বয়স সর্বনিম্ন এক বছর হতে হবে, যদি আপনি এই কাজটা করে থাকেন তাহলে আপনি ইসলামী ব্যাংক ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনি যদি একজন ব্যবাসায়ি হয়ে থাকেন তাহলে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশেষ ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর দরকার হবে। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যে সকল ডকুমেন্ট নেওয়া হবে সেগুলো হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট।

গ্যারান্টর কে হবেন?

ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি বা ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনার ২ জন গ্যারান্টর থাকতে হবে। বাবা-মা ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন বা কাছের মানুষকে আপনি গ্যারান্টর করতে পারবেন। এটা সম্পূর্ণ আপনার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তবে অবশ্যই যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল তাদেরকে গ্যারান্টর করতে হবে।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট

ইসলামী ব্যাংক থেকে হোম লোন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার নিজস্ব ব্যক্তিমালিকানার একটা জমি থাকতে হবে কিংবা আপনার পিতার নামে যে কোন একটা জমি থাকলে হবে। এছাড়াও এখানে দরকার হবে জমির মূল দলিল, এখানে সার্টিফাইড কপি গ্রহনযোগ্য হবে না। বিস্তারিত নিচে দেখুন—
প্রাইভেট প্লেটের ক্ষেত্রে

  • জমির মূল মালিকানা দলিল, বায়া দলিল।
  • সিএস, এসএ, আরএস ও বিএস খতিয়ানের জাবেদা নকল।
  • ডিসিআর, খাজনা রশিদ ও নামজারী খতিয়ান।
  • জেলা/সাব রেজিষ্ট্রি অফিস কর্তৃক ইস্যুকৃত ১২ (বার) বছরের নির্দায় সনদ (এনইসি)।

সরকারী প্লটের ক্ষেত্রে

  • প্লটের বরাদ্দ পত্র।
  • দখল হস্তান্তর পত্র।
  • মূল লীজ দলিল ও বায়া দলিল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
  • লীজ দাতা প্রতিষ্ঠান হতে বন্ধক অনুমতি পত্র।
  • হস্তান্তর মূলে মালিক হলে হস্তান্তর অনুমতিপ্রত ও নামজারী, ডিসিআর ও খাজনা রশিদ।

আরও পড়ুনঃ


ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ইনভেস্টমেন্ট পলিসি অন্যান্য অনেক ব্যাংকের চেয়ে একটু কঠিন। সকলে এই ব্যাংকের ইনভেস্টমেন্ট এর আওতায় আসতে পারে না। তবে এই ব্যাংকের সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে ইন্টারেস্ট পলিসি। ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হওয়ায় এখানে ইন্টারেস্ট এর নামে মানুষকে শোষণ করা হয় না। যার ফলে আপনি সহজেই এই ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন চালিয়ে যেতে পারেন। পুরো আর্টিকেলটি পড়ার পর আশা করছি আপনি এখন জানেন ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার পদ্ধতি বা নিয়ম। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

COMMENTS

WORDPRESS: 0